মানুষের জীবনের প্রতিটি ধাপ, প্রতিটি অর্জন, এমনকি প্রতিটি নিঃশ্বাসও নির্ভর করে এক অলৌকিক ব্যবস্থার উপর — সেটিই হলো রিজিক। আমরা যখন ‘রিজিক’ বলি, তখন অনেকেই শুধু অর্থ, সম্পদ বা জীবিকার কথাই বুঝি। কিন্তু ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গিতে রিজিক একটি বহুমাত্রিক ও গভীর ধারণা, যার বিস্তৃতি আমাদের জীবনের সবখানে — দেহ, মন, পরিবার, সমাজ ও আখিরাত পর্যন্ত।
রিজিক শুধু খাবার কিংবা টাকা-পয়সা নয়, বরং এর অন্তর্নিহিত স্তরগুলো আমাদের জীবনের প্রকৃত সাফল্য ও উদ্দেশ্যকে প্রতিফলিত করে। আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, পারিবারিক শান্তি, সম্মান, নেক সন্তান এমনকি আল্লাহর সন্তুষ্টিও রিজিকের অংশ।
এই লেখায় আমরা রিজিকের সেই চারটি স্তরের দিকে গভীরভাবে তাকাবো, যা আমাদের জীবনকে অর্থবহ করে তোলে এবং আমাদের অন্তরকে আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলে মজবুত করে।
রিজিক এর ৪ টি স্তর
- রিজিকের সর্বনিম্ন স্তরঃ টাকা, পয়সা, অর্থ, সম্পদ অর্থাৎ জীবিকা।
- সর্বোচ্চ স্তরঃ শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা এবং সামাজিক ও আত্মিক সম্মান।
- সর্বোত্তম স্তরঃ পুণ্যবান স্ত্রী ও পরিশুদ্ধ নেক সন্তান এবং সম্মানজনক জীবন।
- পরিপূর্ণ স্তরঃ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি।
রিজিক খুব গভীর একটি বিষয় যদি আমরা বুঝতে পারি।
আমি পুরো জীবনে কত টাকা আয় করবো সেটা লিখিত, কে আমার জীবনসঙ্গী হবে সেটা লিখিত, কবে কোথায় মারা যাবো সেটা লিখিত।
আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, আমি কতগুলো দানা ভাত দুনিয়াতে খেয়ে তারপর মারা যাবো সেটা লিখিত। একটি দানাও কম না, একটিও বেশি না।
আমি যেই ফলটি আজকে ঢাকা বসে খাচ্ছি, সেটা হয়ত ইতালি কিংবা থাইল্যান্ড থেকে ইমপোর্ট করা। ওই গাছে যখন মুকুল হয়েছে তখনই এটা নির্ধারিত যে সেটি আমার কাছে পৌঁছাবে। এর মধ্যে কত পাখি ওই ফলের উপর বসেছে, কত মানুষ এই ফলটি পাড়তে গেছে, দোকানে অনেকে এই ফলটি নেড়েচেড়ে রেখে গেছে, পছন্দ হয় নি, কিনে নি। এই সব ঘটনার কারণ একটাই, ফলটি আমার রিজিকে লিখিত। যতক্ষণ না আমি কিনতে যাচ্ছি, ততক্ষণ সেটা ওখানেই থাকবে।
এর মধ্যে আমি মারা যেতে পারতাম, অন্য কোথাও চলে যেতে পারতাম, কিন্তু না। রিজিকে যেহেতু লিখিত আমি এই ফলটি না খেয়ে মারা যাবো না।
রিজিক জিনিসটা এতোটাই শক্তিশালী!
কিংবা যেই আত্মীয় কিংবা বন্ধু-বান্ধব আমার বাসায় আসছে, সে আসলে আমার খাবার খাচ্ছে না। এটা তারই রিজিক, শুধুমাত্র আল্লাহ্ তায়ালা আমার মাধ্যমে তার কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। হতে পারে এর মধ্যে আমাদের জন্য মঙ্গল রয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ্… ।
কেউ কারওটা খাচ্ছে না, যে যার রিজিকের ভাগই খাচ্ছে।
আমরা হালাল না হারাম উপায়ে খাচ্ছি সেটা নির্ভর করছে আমি আল্লাহ্ তায়ালার উপর কতটুকু তাওয়াক্কাল আছি, কতটুকু ভরসা করে আছি।
অন্যদিকে, সম্মান রিজিকের একটি সূক্ষ্ম কিন্তু মহামূল্যবান রূপ, যা কখনো অর্থের চেয়ে অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায়। সম্মান শুধুমাত্র সম্পদ বা টাকা দিয়ে আসে না। এটি আসে আল্লাহর নৈকট্য, আচরণ, জ্ঞান, সচ্চরিত্র, এবং সঠিক আমল থেকে। যেমন একজন মানুষ অল্প আয় করেও সমাজে অত্যন্ত সম্মানিত হতে পারে, আবার কোটিপতি হয়েও অসম্মানজনক জীবন যাপন করতে পারে।
অন্তরে তাওয়াক্কুল থাকুক, সঠিক পথ, সম্মান ও হালাল রিজিকের তৌফিক আল্লাহ সবাইকে দিন—আমিন।
রিজিকের চারটি স্তর – উদাহরণ
রিজিক—এটি শুধু জীবিকা নয়, এটি এক পরম রহস্য, এক মহান আল্লাহ্র তরফ থেকে নির্ধারিত অনুগ্রহ।
📌 রিজিকের স্তরগুলোঃ
🔹 সর্বনিম্ন স্তর:
টাকা, পয়সা, অর্থ ও সম্পদ—যা আমাদের দৈনন্দিন জীবিকার চাহিদা মেটায়।
🔹 সর্বোচ্চ স্তর:
শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা,
সাথে সামাজিক ও আত্মিক সম্মান—যা অর্থে মেলে না, বরং আচরণ ও আমলের ফল।
🔹 সর্বোত্তম স্তর:
পুণ্যবান জীবনসঙ্গী ও পরিশুদ্ধ নেক সন্তান,
আর সম্মানজনক জীবন—যা দুনিয়া ও আখিরাতে প্রশান্তির কারণ।
🔹 পরিপূর্ণ স্তর:
মহান আল্লাহ্র সন্তুষ্টি—এই রিজিকেই সবকিছু পূর্ণতা পায়।
🕊 রিজিক—এক অলৌকিক পরিকল্পনা
রিজিক এমন এক বিষয়—যদি আমরা বুঝি, তবে অবাক না হয়ে পারি না।
আমি জীবনে কত টাকা আয় করব, কে হবে আমার জীবনসঙ্গী, কবে কোথায় মৃত্যু হবে—সবই আগে থেকেই লিখিত।
এমনকি আমি কয়টি দানা ভাত খেয়ে দুনিয়া ছাড়ব, সেটাও নির্ধারিত।
এক দানাও বেশি নয়, একটিও কম নয়।
🍎 আজ আমি যে ফলটি খাচ্ছি, হয়ত তা এসেছে ইতালি বা থাইল্যান্ড থেকে।
ওই গাছে যখন প্রথম মুকুল ধরেছিল, তখনই তা নির্ধারিত হয়ে গেছে—এই ফলটি আমার হবে।
পাখি বসেছে, মানুষ তুলেছে, কেউ কিনেছে না, কেউ নেড়েছে-চেড়ে রেখে দিয়েছে—
এই সব আয়োজন শুধু আমার রিজিককে আমার হাতে পৌঁছাতে।
আমি না কেনা পর্যন্ত ফলটি দোকানে অপেক্ষায় থাকবে।
আমি যদি আগে মারা যেতাম, তবে সেটি অন্য কারও হতো—কিন্তু যেহেতু সেটি আমার রিজিক, তাই আমি না খাওয়া পর্যন্ত সেটি রিজিকের রাস্তা ছাড়বে না।
🏠 আমার ঘরে যে আত্মীয় বা বন্ধু এসেছে, সে আসলে আমার খাবার খাচ্ছে না।
সে খাচ্ছে তার নিজের রিজিক, শুধু আল্লাহ্ আমার হাত দিয়ে তাকে পৌঁছে দিচ্ছেন।
এভাবেই হয়তো আমাদের জন্য রহমতের কোনো দরজা খুলে যাচ্ছে—আলহামদুলিল্লাহ্।
🧭 তাওয়াক্কুলের গুরুত্ব
কেউ কারও রিজিক খায় না।
যার যা নির্ধারিত, সে তাই-ই ভোগ করবে।
তবে প্রশ্ন হলো—আমরা সেটা হালাল পথে নিচ্ছি, না হারামের পথে?
এটাই নির্ভর করছে—আল্লাহ্র উপর আমাদের তাওয়াক্কুল কতটা গভীর।
🏵 সম্মান—রিজিকের সূক্ষ্ম কিন্তু মহামূল্যবান রূপ
সম্মান কখনো টাকায় মেলে না।
এটি আসে আল্লাহর নৈকট্য, সচ্চরিত্র, জ্ঞান, ও আমলের মাধ্যমে।
কেউ হয়তো অল্প আয়ে জীবন কাটাচ্ছেন, কিন্তু সমাজে তার সম্মান অসাধারণ।
আবার কোটিপতি হয়েও কেউ হয়তো অশান্তি ও অসম্মানে ডুবে আছেন।
তাই সম্মান—এটাও এক অমূল্য রিজিক, যার জন্য প্রয়োজন তাওয়াক্কুল, আমল, ও খালিস নিয়ত।
🤲 শেষ কথাঃ
আল্লাহ্ যেন আমাদের সবাইকে হালাল উপার্জনের তৌফিক দেন,
ভরসা ও তাওয়াক্কুলের সাথে রিজিক গ্রহণ করতে শেখান,
দেন সম্মানিত জীবন, সুস্থতা, নেক সঙ্গী-সন্তান—
এবং সর্বোপরি, নিজ সন্তুষ্টির ছায়ায় রাখেন।
আমিন।